একটি কিংবা একই ধরনের, বিশেষত একই কালার টেম্পারেচারের একাধিক আলোক উৎস দিয়ে ছবি তুলতে হোয়াইট ব্যালেন্স নিয়ে কোনো জটিলতা হয় না। যেমন ধরুন, সবগুলো আলোক উৎস যদি ফ্ল্যাশ হয় তবে ছবি তুলতে হোয়াইট ব্যালেন্স ফ্ল্যাশ সেট করলেই ছবিতে সঠিক রঙ আসবে। অথবা সবগুলো আলোক উৎস যদি টাঙ্গস্টেন হয় তবে ছবি তুলতে হোয়াইট ব্যালেন্স টাঙ্গস্টেন/ইনক্যান্ডেসেন্ট সেট করলেই ছবিতে সঠিক রঙ আসবে। ঐ সব আলোতে প্রিসেট ব্যালেন্স করে নিলে আরো সঠিক ফলাফল পাওয়া যাবে।
ছবি তুলতে যদি ভিন্ন ভিন্ন রকম কালার টেম্পারেচারের একাধিক রকম আলোক উৎস ব্যবহার হয়, তাহলেই যত সমস্যা । যেমন ধরুন, বিয়ে বাড়িতে এক দিক থেকে ভিডিওগ্রাফার সানগানের আলোতে ভিডিও করছেন । সানগান মূলত টাঙ্গস্টেন (টাঙ্গস্টেন-হ্যালোজেন) লাইট, যার কালার টেম্পারেচার ৩২০০ থেকে ৩৪০০ কেলভিন হতে পারে। আপনি অন্য দিক থেকে ফ্ল্যাশসহ এমনভাবে ছবিটা তুলতে চান, যাতে ফ্ল্যাশ এবং সানগান উভয়টিই এক্সপোজারে অংশ নেয়। এটা করতে চাইলে শাটার স্পিড কিছুটা স্লো রাখতে হয়। শাটার স্পিড যত স্লো রাখবেন সানগানের এক্সপোজার আনুপাতিকভাবে তত বাড়বে। আবার এতটা স্লো (যেমন: ৩০’র নিচে ২৫, ২০, ১৫, ১০ ইত্যাদি) করা যাবে না যাতে হাত কাপলে বা বিষয়বস্তু নড়লে ছবি ব্লার হয়ে যায়। অন্যদিকে ফ্ল্যাশের আলো কিছুটা কমিয়ে না রাখলে ফ্ল্যাশের আলো দিয়েই প্রায় পুরো এক্সপোজ হতে পারে; সেখানে সানগান ব্যবহার করা হয়েছে, ছবি দেখে তা মনেই হবে না।
অনেকেই সানগানের এক্সপোজার এড়ানোর জন্য ফ্ল্যাশটিকে সর্বোচ্চ আউটপুটে (১/১) রেখে হাইয়েস্ট সিঙ্ক স্পিডে (ক্যামেরাভেদে ২০০ কিংবা ২৫০), অ্যাপারচার ছোট রেখে ছবি তুলে থাকেন। এতে ঘরের এক্সিস্টিং লাইটগুলো একদম এক্সপোজ না হওয়ায় বাস্তবতা নষ্ট হয়। মূল বিষয়ের পেছনের দৃশ্য কালো হয়ে যায়। আমার মতে এটা কোনো ভালো পদ্ধতি নয়।
আবার মূল ঘটনায় আসা যাক। একজন মানুষের মুখমণ্ডলের পেছনের কর্নার থেকে যদি সানগানের আলো আসে আর সামনে থেকে যদি ফ্ল্যাশের আলো পড়ে এবং উভয় আলোকে যদি সমান এক্সপোজ করার সুযোগ দেয়া হয়, তাহলে ছবিটি রঙ বিবেচনায় কত রকম হতে পারে? এ অবস্থায় হোয়াইট ব্যালেন্স যদি ফ্ল্যাশ সেট করা হয় তাহলে মুখমণ্ডলের ফ্ল্যাশে আলোকিত অংশ স্বাভাবিক রঙে এবং সানগানে আলোকিত অংশে হলুদ / কমলা রঙের আভা দেখাবে (নকশা: ৬)। এ রকম হওয়াটা যে খারাপ, তা নয়, বরং এটিকে আর্টিস্টিক মনে করা যেতে পারে । হোয়াইট ব্যালেন্স যদি টাঙ্গস্টেন সেট করা হয় তাহলে ফ্ল্যাশে আলোকিত অংশ ব্লুইশ এবং সানগানে আলোকিত মুখমণ্ডলের অংশ স্বাভাবিক রঙে দেখাবে (নকশা: ৭)। মুখমণ্ডলের একটি কর্নারে কমলা রঙের আভা যতটা ভালো লাগছিল, সে তুলনায় এটি মোটেও ভালো লাগবে না। কেননা মুখমণ্ডলের বেশিরভাগ অংশকে ব্লুইশ দেখাটা কেউ পছন্দ করবে না ।
যদি ফ্ল্যাশে আলোকিত অংশ এবং সানগানে আলোকিত অংশ উভয়ে স্বাভাবিক চাই, তা হলে কী করার? কোনো কোনো পণ্ডিত (?) ব্যক্তি বলবেন, প্রিসেট ব্যালেন্স এর সমাধান। আরো বড় পণ্ডিতরা (??) বলবেন, ক্যামেরায় অটো-হোয়াইট ব্যালেন্স সেট করলে ক্যামেরাই সব ঠিক করে নেবে। আমার মত একটা বড় মাপের পাগল (???) বলে, ওপরের দুটি সিদ্ধান্তের কোনোটিই সঠিক ফলাফল দেবে না।
তা হলে সমাধানটা কী? হ্যা, সমাধান হল ফ্ল্যাশ এবং সানগান উভয় উৎসকে একই কালার টেম্পারেচারে পরিবর্তন করা। একটু পরেই আমরা এই সমাধানে আসছি।
আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার পরিবর্তন করার উপায়
কাজ করে শেখা কিংবা কাজ দেখে শেখার মত আর কোনোভাবে এত ভালো শেখা হয় না। আমি একদিন টেলিভিশন বিজ্ঞাপন শুটিং’র সাথে স্টিল ফটো তোলার কাজ করছিলাম। যে দৃশ্যটি শুট হচ্ছিল সেটা হল, স্ত্রী বাড়ির আঙ্গিনায় কাপড় শুকাতে দিচ্ছেন, সেই সময় স্বামী দূর দেশ থেকে এসে উপস্থিত’। দৃশ্যটি সকাল বেলা কিংবা দুপুরে শুট করা উচিত ছিল। কিন্তু অন্য সব কাজ গুছিয়ে আসতে আসতে পড়ন্ত বিকেলে ঠেকেছিল। সূর্য্য বাঁশ বাগানের আড়ালে চলে গেছে, রোদ নাই, ছায়ায় কাপড় শুকানোর বিষয়টা বেমানান। সিদ্ধান্ত হল সিনেমা শুটিং’র শক্তিশালী একটা লাইটকে (এটাকে ওঁরা পাঞ্জা বলে, যা প্রায় ৫০০০ ওয়াটের) সূর্যের মতো করে সেট করা হবে। পাঞ্জাটাকে অনেক ওপরে স্ট্যান্ড দিয়ে সেট করা হল। তার আলো বাড়ির আঙ্গিনাকে অনেকটা সূর্যের মতোই আলোকিত করছিল। এ ধরনের বিকল্প কোনো পদ্ধতিকে চিট করা বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সমস্যা দাড়ালো অন্য রকম। পাঞ্জার ভেতরের বাল্ব হচ্ছে টাঙ্গস্টেন হ্যালোজেন, যার কালার টেম্পারেচার ৩৪০০ কেলভিনের কাছাকাছি। অর্থাৎ এর আলো হলুদ/কমলা রঙের। এক্সিটিং লাইট ছিল নীল আকাশের নীল আলো, যা প্রায় ১০,০০০ কেলভিন। অতএব বিষয়বস্তুর যে সকল অংশে পাঞ্জার আলো পড়ছিল, সেগুলো কমলা রঙের আর নীল আকাশের আলোয় আলোকিত অংশগুলো ব্লুইশ দেখাচ্ছিল।
সাধারণত রঙিন ফিল্টার ব্যবহার করে কোনো আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার পরিবর্তন করা হয়ে থাকে। বিশাল আকাশের ওপর কোনোভাবেই ফিল্টার প্রয়োগ সম্ভব নয়। বরং পাঞ্জার ওপর ফিল্টার প্রয়োগ সম্ভব। এর ওপর বিশেষ মাত্রার নীল ফিল্টার (ব্লু-জেল) লাগানো হল। ফলে পাঞ্জার আলোর কালার টেম্পারেচার প্রায় ১০,০০০ কেলভিনে পরিবর্তিত হল। ফলে বিষয়বস্তুর এক পাশে কমলা রঙের আভা এবং অন্য পাশে নীল রঙের আভা তৈরি হওয়া বন্ধ হল।
টাঙ্গস্টেন লাইটের সামনে ব্লু ফিল্টার লাগিয়ে ঐ আলোর কালার টেম্পারেচার দিনের যে কোনো সময়ের আলোর সমমান করা সম্ভব। একইভাবে ফ্ল্যাশের সামনে কমলা রঙের (অ্যাম্বার বলা হয়ে থাকে) ফিল্টার লাগিয়ে ফ্ল্যাশের আলোর কালার টেম্পারেচার টাঙ্গস্টেন আলোর সমমান করা সম্ভব। কিন্তু নির্দিষ্ট মাত্রার অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার পাবেন কীভাবে?
আড়াই ইঞ্চি গুনন তিন ইঞ্চি (প্রায়) সাইজের রেডিমেট কালার ফিল্টারের সেট দেশীয় ফটোগ্রাফিক যন্ত্রপাতির দোকানে পাওয়া যেতে পারে। দেশে না পেলে দেশের বাইরে অর্ডার দিয়ে বা কারো মাধ্যমে এই ফিল্টার সেট আনিয়ে নিতে পারেন।

এই ফিল্টার সেটের মধ্যে কয়েক মাত্রায় গাঢ় অ্যাম্বার কালারের (কাঠ পলিশের চাচের মত রঙ), কয়েক মাত্রায় গাঢ় ব্লু ফিল্টার, সাইয়ান, সবুজ এবং লাল রঙের ফিল্টার থাকতে পারে। ফ্ল্যাশের আলোকে টাঙ্গস্টেন লাইটের সাথে মিলানোর জন্য অ্যাম্বার কালারের এবং ফ্ল্যাশের আলোকে টিউব লাইট কিংবা সিএফএল বাল্বের আলোর সাথে মিলানোর জন্য হালকা সবুজ/টিয়ে রঙের ফিল্টার ব্যবহার করা যেতে পারে। ফিল্টার লাগানোর পর ফ্ল্যাশের আলোর কালার টেম্পারেচার সঠিকভাবে পরিবর্তন হল কি না, তা পরীক্ষা করে নিতে হবে।
রঙিন পলিথিন কিংবা সেলোফেন পেপার দিয়েও পরীক্ষা করতে পারেন। এনার্জি ড্রিংক্সের বোতলের রঙ অনেকটা অ্যাম্বার কালারের। প্ল্যাস্টিকের তৈরী বিভিন্ন রঙের ওয়াটার পট (পানি রাখার বোতল) পাওয়া যায়, সেগুলো পছন্দমত সংগ্রহ করে, তা কেটে ফ্ল্যাশের সামনে লাগিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
কী ভাবে বুঝবেন, ফিল্টার লাগানোর পর কালার টেম্পারেচারে সঠিক পরিবর্তন হল
ফ্ল্যাশের সামনে একটা অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার লাগান। ধরে নিলাম এটা লাগানোর পর ফ্ল্যাশটির আলোর কালার টেম্পারেচার সানগানের কালার টেম্পারেচারের সমান হয়ে গেল। তা সত্যি হল কি না, পরীক্ষা করার জন্য একটা পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারি। নমুনা হিসেবে নিউট্রাল সাদা দেয়ালের কোনো অংশ, সাদা কর্কশীট, নিউট্রাল সাদা কাগজ, সাদা টিসু পেপার কিংবা সাদা কাপড় নেই। আমার লেখা ফটোগ্রাফি কলাকৌশল ও মনন বইটির সাথে যে নিউট্রাল কালারের রুমাল দেয়া হয় সেটি দিয়েও পরীক্ষাটি করা যাবে। যেহেতু ফ্ল্যাশ থেকে এখন টাঙ্গস্টেন আলোর মত আলো পাওয়ার কথা, অতএব ক্যামেরায় হোয়াইট ব্যালেন্স টাঙ্গস্টেন (ক্যামেরাভেদে ইনক্যান্ডেসেন্ট) সেট করুন। এবার তিন/চার ফিট দূরে থেকে সঠিক এক্সপোজারে নিউট্রাল কালারের নমুনাটির ছবি তুলুন। ক্যামেরার মনিটরে ছবি দেখে পরীক্ষা করুন, ছবির রঙ বাস্তব জিনিসটির মতই হয়েছে কি না। যদি দেখেন ছবিতে এর রঙ কিছুটা ব্লুইশ হয়ে গেছে, তা হলে বুঝতে হবে অ্যাম্বার কালারের ফিল্টারটি আরেকটু গাঢ় হওয়া প্রয়োজন। আরেকটি হালকা অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার আগেরটির সাথে মিলিয়ে আবার পরীক্ষা করুন। যদি দেখেন এবার কালার নিউট্রাল এসেছে, তবে এই দুটো ফিল্টার একত্র করে দুই কর্নারে সেলাই করে নিন এবং মার্ক করে রাখুন। পরবর্তীতে ফ্ল্যাশের আলোকে কালার টেম্পারেচারের দিক থেকে টাঙ্গস্টেনের সমমান বানাতে এটি কাজে লাগবে ।
ঘটনা উল্টাও হতে পারে। একটা অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার ফ্ল্যাশের সামনে লাগিয়ে ছবি তুলে যদি দেখেন, ছবিতে জিনিসটির রঙ নিউট্রাল না হয়ে কিছুটা ইয়েলোয়িশ রয়ে গেছে, তবে বুঝতে হবে, অ্যাম্বার কালারের ফিল্টারটি বেশি গাঢ় হয়েছে, এর বদলে কিছুটা হালকা অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার প্রয়োজন।
ক্যামেরার মনিটরে দেখে পরীক্ষা করতে দেখার মধ্যে ভুল-ত্রুটি হয়ে যেতে পারে। তোলা ছবিটি ফটোশপে ওপেন করেও এটি পরীক্ষা করা যেতে। ফটোশপের ইনফো বক্সটি ওপেন রাখুন। ছবিটি ওপেন করে নিউট্রাল কালারের অংশটির ওপর কার্সর ধরুন, সাথে সাথে ইনফো বক্সে RGB-এর ভ্যালু দেখাবে। R, G এবং B এর ভ্যালু যদি সমান (যেমন: R-180, G-180 এবং B-180) কিংবা খুব কাছাকাছি ( যেমন: R-181, G-180 এবং B-182 ) দেখায়, তবে বুঝতে হবে ছবিতে নিউট্রাল কালারের জিনিসটির নিউট্রাল কালার উৎপাদন হয়েছে ।
পরীক্ষা করার জন্য আরেকটা উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। একটি টেবিলে সাদা কাপড় বিছিয়ে তার ওপর সাদা কিংবা নিউট্রাল গ্রে কালারের একটি মোটা পাইপ দাড় করে রাখুন। সাদা পাইপ না পেলে সাদা টয়লেট টিসুর রোল ব্যবহার করতে পারেন। এটিও নিউট্রাল সাদা রঙের হয়ে থাকে। এর একপাশে একটি টাঙ্গস্টেন লাইট এবং উল্টো পাশে একটি ফ্ল্যাশ স্ট্যান্ডে সেট করা থাকবে। ফ্ল্যাশ রিমোটের সাহায্যে জ্বলবে।
টাঙ্গস্টেন লাইট এবং ফ্ল্যাশকে এমনভাবে সেট করতে হবে যাতে ক্যামেরায় দুটো আলো প্রায় সমান এক্সপোজ করে। আলো দুটোর দূরত্ব বাড়িয়ে কমিয়ে, প্রয়োজনে ফ্ল্যাশের পাওয়ার কমিয়ে এটা করা যেতে পারে। ক্যামেরায় শাটার স্পিড স্রো করলে টাঙ্গস্টেন লাইটের এক্সপোজার বাড়বে। এক্সপোজার সমান হওয়ার ব্যাপারটি ছবি তুলে কিংবা হ্যান্ডহেল্ড মিটার দিয়ে পরীক্ষা করতে হবে।

কোনো কোনো সময় টিউব লাইট কিংবা সিএফএল বাঘের সাথে ফ্ল্যাশ ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। যেমন ধরুন, একটি গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রিতে বিশাল জায়গা জুরে কর্মীরা সেলাই মেশিনে কাজ করছে। তাদের সবার ওপর টিউব লাইট জ্বলছে। এই ছবিটি তোলার সময় ক্যামেরা দিক থেকে ফ্ল্যাশ জ্বালাতে যাচ্ছেন। ক্যামেরায় হোয়াইট ব্যালেন্স যদি টিউব লাইটের জন্য ইনফ্লোরেসেন্ট সেট করেন, তবে টিউব লাইটে আলোকিত অংশগুলো ছবিতে স্বাভাবিক রঙে আসবে, অন্য দিকে ফ্ল্যাশের আলোতে আলোকিত (ফিল হওয়া) অংশগুলো কিছুটা রেডিশ / পিংকিশ হবে। ফ্ল্যাশের ওপর যদি বিশেষ মানের সবুজ রঙের ফিল্টার লাগানো হয়, তবে ফ্ল্যাশের আলোর কালার টেম্পারেচার সঠিকভাবে সিএফএল/টিউব লাইটের সমমান হয়ে যাবে এবং পুরো দৃশ্য টিউব লাইটে আলোকিত হওয়ার মত ফলাফল তৈরি করবে।
কোনো আলোক উৎসের কিংবা ফিল্টার লাগানো কোনো আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার নিরূপণের প্রফেশনাল উপায় হল ‘কেলভিন মিটার’ ব্যবহার করা। এটাকে কালার মিটার বা স্পেকট্রোমিটারও বলা হয়ে থাকে। এটা দিয়ে খুব সহজেই বোঝা যাবে ফিল্টার লাগানো কোনো আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার আরেকটি আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচারের সমমান হল কি না। তবে একটি কেলভিন মিটার জোগাড় করা সহজসাধ্য নয়। সে ক্ষেত্রে ওপরে উল্লেখিত উপায়গুলো সহজ সমাধান দেবে।

র-কনভার্টরের সাহায্যে যে কোনো আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার মাপা যাবে
মনে করুন ফ্ল্যাশের সামনে একটি অ্যাম্বার কালারের ফিল্টার লাগানোর পর সেটির কালার টেম্পারেচার কত দাড়ালো তা মাপতে চাই। ‘র-কনভার্টর’ এর সাহায্যে তা বের করা খুবই সহজ। একটি সঠিক নিউট্রাল কালারের জিনিস নিন। একটা সাদা কর্ক শিটের টুকরা দিয়ে পরীক্ষাটি করতে পারেন। কম আলোকিত ঘরে (যাতে ঘরের আলো এক্সপোজারে অংশ না নেয়) ফিল্টার লাগানো ফ্ল্যাশ দিয়ে সঠিক এক্সপোজারে ‘র- ফরমেটে’ কর্ক শিটের ছবি তুলুন। এই ছবিটি কম্পিউটারে কপি করে নিয়ে ‘র-কনভার্টরে’ (অ্যাডোবি র-কনভার্টর হতে পারে) ওপেন করুন। হোয়াইট ব্যালেন্স টুল নিন, কর্ক শিটের ছবির কোনো পয়েন্টে ক্লিক করুন। ডান পাশে হোয়াইট ব্যালেন্স অপসনে নতুন নাম্বার চলে আসবে, সেটাই হল ফিল্টার লাগানো ফ্ল্যাশের পরিবর্তিত কালার টেম্পারেচার। এই সংখ্যাটি যদি ৩২০০ হয়, তবে বোঝা যাবে এটি সানগানের সমমান হয়েছে।

একই নিয়মে যে কোনো আলোক উৎসের কালার টেম্পারেচার নিরূপণ করা যাবে। তবে এটি কেলভিন মিটার ব্যবহারের মত সহজ নয়।
ভিন্ন দুই কালার টেম্পারেচারের আলোতে ফিল্টার ছাড়া/ফিল্টারসহ মুখমণ্ডলের ছবি

এই প্রবন্ধটি পড়ে যদি কেউ বুঝতে না পারেন, তবে অনুগ্রহ করে আলোক উৎসের রঙ-তাপ, হোয়াইট ব্যালেন্স এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করুন এবং কিছু প্র্যাকটিস করুন, তারপর প্রবন্ধটি আবার পড়ুন ।
Rafiqul Islam, FBPS